আহ, বন্ধুরা! কখনও ভেবে দেখেছেন, বিশ্বের একেক কোণায় কত অসাধারণ সংস্কৃতি আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা কত মিষ্টি সুর লুকিয়ে আছে? আমার তো মনে হয়, প্রতিটা ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রের পেছনেই একটা গল্প থাকে, যা আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। কিছুদিন আগে লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে গিয়ে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেছি!
তাদের কোকলে, ডিউডাস আর স্টেবিলাইটস – নামগুলোও যেমন মজার, এদের সুরও তেমন মন ভালো করে দেওয়া। যখন প্রথমবার কোকিলের মিষ্টি টুংটাং শব্দ শুনলাম, মনে হলো যেন এক প্রাচীন সুরের ধারায় ভেসে যাচ্ছি, যা আধুনিকতার এই যুগেও তার নিজস্ব সৌন্দর্য ধরে রেখেছে। এই যন্ত্রগুলো শুধু সুরের বাহক নয়, লাটভিয়ার আত্মার এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি, যা আজও তাদের লোকসংস্কৃতির প্রাণ। ভাবুন তো, আজও যখন উৎসব বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এই যন্ত্রগুলো বেজে ওঠে, তখন কেমন একটা নস্টালজিক আমেজ তৈরি হয়!
আসুন, এই অসাধারণ বাদ্যযন্ত্রগুলোর গভীর দুনিয়ায় ডুব দেওয়া যাক এবং খুঁজে বের করি এদের প্রতিটি তারে বাঁধা সেই পুরোনো দিনের জাদুকে। এই ব্লগে আমরা জানব লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত!
আহ, বন্ধুরা! বিশ্বের কোকায় কোকায় কত যে অসাধারণ সংস্কৃতি আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা কত মিষ্টি সুর লুকিয়ে আছে, তা ভাবলে আমি তো মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। আমার মনে হয়, প্রতিটা ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রের পেছনেই একটা গল্প থাকে, যা আমাদের মন ছুঁয়ে যায় আর অতীতের অনেক কথা মনে করিয়ে দেয়। কিছুদিন আগে লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেছি!
তাদের কোকলে, ডিউডাস আর স্টেবিলাইটস – নামগুলোও যেমন মজার, এদের সুরও তেমন মন ভালো করে দেওয়া। যখন প্রথমবার কোকিলের মিষ্টি টুংটাং শব্দ শুনলাম, মনে হলো যেন এক প্রাচীন সুরের ধারায় ভেসে যাচ্ছি, যা আধুনিকতার এই যুগেও তার নিজস্ব সৌন্দর্য ধরে রেখেছে। এই যন্ত্রগুলো শুধু সুরের বাহক নয়, লাটভিয়ার আত্মার এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি, যা আজও তাদের লোকসংস্কৃতির প্রাণ। ভাবুন তো, আজও যখন উৎসব বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এই যন্ত্রগুলো বেজে ওঠে, তখন কেমন একটা নস্টালজিক আমেজ তৈরি হয়!
এই অসাধারণ বাদ্যযন্ত্রগুলোর গভীর দুনিয়ায় ডুব দেওয়া যাক এবং খুঁজে বের করি এদের প্রতিটি তারে বাঁধা সেই পুরোনো দিনের জাদুকে।
কোকলে: লাটভিয়ার সুরের প্রাণ

লাটভিয়ার লোকসংগীতের কথা বললেই যে যন্ত্রটির নাম সবার আগে মনে আসে, সেটা হলো কোকলে। এই তারযুক্ত যন্ত্রটি অনেকটা আমাদের পরিচিত সিতার বা বীণার মতো, কিন্তু এর একটা নিজস্ব স্বতন্ত্র সুর আর বৈশিষ্ট্য আছে যা সত্যিই অসাধারণ। আমার মনে হয়, কোকলে শুধু একটা বাদ্যযন্ত্র নয়, এটা লাটভিয়ানদের আত্মার প্রতিচ্ছবি। এর মিষ্টি, শান্ত সুর যেন দূরের কোনো পাহাড়ের কোলে ভেসে আসা বাতাসের শব্দ, অথবা পুরোনো দিনের কোনো রূপকথার গল্প। যখন আমি প্রথম কোকলের সুর শুনি, আমার মনে হয়েছিল, যেন হাজার বছরের পুরোনো কোনো ইতিহাস আমার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এর ধ্বনি এতো মায়াবী যে শুনতে শুনতে আপনি কখন এক অন্য জগতে চলে যাবেন, টেরও পাবেন না। লাটভিয়ার প্রতিটি বাড়িতে এখনো কোকলে খুবই সম্মানের সাথে রাখা হয়, যেন ঘরের এক মূল্যবান সম্পদ। এই যন্ত্রের সুর মানুষের মনকে শান্তি দেয়, জীবনের ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্তগুলোকে আরও মধুর করে তোলে। এই যন্ত্রটার সঙ্গে লাটভিয়ানদের আবেগ আর স্মৃতি এতটাই জড়িয়ে আছে যে, এটা তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি কেবল সঙ্গীত নয়, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী গল্প যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
কোকলের গঠন ও প্রকারভেদ
কোকলে দেখতে অনেকটা ফাপা কাঠের বাক্সর মতো, যার উপর পাতলা কাঠের সাউন্ডবোর্ড থাকে এবং এর উপরে তার লাগানো থাকে। এর আকার সাধারণত ট্র্যাপিজয়েডের মতো হয়, আর তারগুলো এক প্রান্তে কাছাকাছি এবং অন্য প্রান্তে একটু দূরে দূরে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে কোকলে ৬ থেকে ৯টি তার দিয়ে তৈরি হলেও, আধুনিক কনসার্ট কোকলেতে ১৭ থেকে ২৩টি বা তারও বেশি তার থাকতে পারে, এমনকি ৩২টি তারও দেখা যায়। তারগুলো পিতল বা স্টিলের হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোকরের তারের সংখ্যা এবং কাঠের ধরন, যেমন ম্যাপেল বা লিন্ডেন, যন্ত্রটির সুরের গুণগত মান অনেকটাই বদলে দেয়। ঐতিহ্যবাহী কোকলে এক টুকরা কাঠ খোদাই করে তৈরি করা হয়, যা এটিকে এক বিশেষ ঐতিহ্যবাহী রূপ দেয়। আবার আধুনিক “কনসার্ট কোকলে”গুলো আকারে বড় হয় এবং সেগুলোকে স্ট্যান্ডের উপর রেখে বাজানো হয়। সাধারণত, বাদ্যযন্ত্রী কোকলে তার কোলে রেখে বা টেবিলের উপর রেখে বাজান, ডান হাতের তর্জনী দিয়ে তারে আঘাত করেন আর বাম হাত দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত তারগুলো নিস্তব্ধ করে দেন। এই বাজানোর পদ্ধতিটাই কোকলের সুরকে এত স্বতন্ত্র করে তোলে।
প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক মঞ্চে
কোকলের ইতিহাস প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ১৩শ শতাব্দীর কোকলে পাওয়া গেছে এবং ১৭শ শতাব্দীর লেখায়ও এর উল্লেখ আছে। একসময় লাটভিয়ার কিছু অঞ্চলে, বিশেষত কুরজেম এবং লাটগালের বাইরে এই যন্ত্রটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে লোকসংস্কৃতি আন্দোলনের সময় কোকলের পুনরুজ্জীবন ঘটে, যা লাটভিয়ানদের জন্য এক নতুন আশার আলো নিয়ে আসে। আধুনিক কোকলে বাদ্যযন্ত্রী, যেমন লাইমা ইয়ানসোন, কোকলের সুরকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন, যা সত্যি প্রশংসার যোগ্য। আমার মনে হয়, এই ধরনের উদ্যোগগুলোই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরে। লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী গান ও নাচ উৎসবে শত শত কোকলে বাদকের একযোগে পরিবেশনা সত্যিই এক মন মুগ্ধকর দৃশ্য। এই যন্ত্রটি কেবল অতীতের স্মারক নয়, এটি লাটভিয়ানদের জাতীয় পরিচয়ের এক শক্তিশালী প্রতীক, যা তাদের সম্মিলিত আত্মার কথা বলে। এই উৎসবগুলো দেখে আমার মনে হয়, সংস্কৃতিকে ভালোবাসার এমন সুন্দর উদাহরণ সত্যিই বিরল।
ডিউডাস: উৎসবের প্রাণবন্ত ধ্বনি
ডিউডাস, যা লাটভিয়ান ব্যাগপাইপ নামে পরিচিত, লাটভিয়ার উৎসব আর উদযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর শক্তিশালী, প্রতিধ্বনিত সুর যেন উৎসবের মেজাজকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ১৬শ থেকে ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত এই যন্ত্রটির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। আমার মনে হয়, এই যন্ত্রের সুর শুনলে যে কারোরই নাচতে ইচ্ছে করবে! এর উচ্চকিত ধ্বনি শুধু মানুষকে আনন্দই দেয় না, বরং একতা আর সম্মিলিত উচ্ছ্বাসের প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ করে বিয়ে বা বড় কোনো লোকনৃত্য অনুষ্ঠানে ডিউডাসের উপস্থিতি যেন অপরিহার্য। এর সুর বাতাসের সঙ্গে মিশে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে, যা মানুষকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসে। একসময় এটি অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছিল, কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এর পুনরুজ্জীবন ঘটানো হয়, যা লাটভিয়ানদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির এক দারুণ উদাহরণ। যখন ডিউডাসের প্রাণবন্ত সুর বাজানো হয়, তখন মনে হয় যেন পুরো সম্প্রদায় একসাথে আনন্দ করছে, তাদের ঐতিহ্যকে উদযাপন করছে। এই যন্ত্রের মধ্যে আমি এক ধরনের বিদ্রোহ আর তার সাথে গভীর ঐতিহ্যের মিশেল দেখতে পাই, যা আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে।
ডিউডাসের ইতিহাস ও নির্মাণশৈলী
ডিউডাস সাধারণত ভেড়া বা ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি একটি থলি এবং এর সাথে লাগানো কয়েকটি পাইপ দিয়ে গঠিত। থলিটা মূলত বাতাস ধরে রাখার কাজ করে, আর পাইপগুলো দিয়ে সুর বাজানো হয়। ১৬শ শতাব্দীর শুরু থেকেই লিভোনিয়া অঞ্চলে এর ব্যবহার শুরু হয়, এবং এর প্রাচীনতম প্রমাণ ১৫৫০ সালের একটি প্রকাশনায় পাওয়া যায় যেখানে একজন ব্যাগপাইপারকে নাচের সঙ্গ দিতে দেখা যায়। আমার কাছে এই তথ্যটা খুবই আকর্ষণীয় লাগে যে, একটা সময় ডিউডাস বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু তারপরও এটি কুর্জেমের মতো কিছু অঞ্চলে টিকে ছিল। চামড়ার থলিটি খুব যত্ন করে সেলাই করা হয় যাতে বাতাস বেরিয়ে যেতে না পারে। এর সাথে যুক্ত একটি ব্লোপাইপ দিয়ে থলির মধ্যে বাতাস ভরা হয়। সাধারণত এতে একটি সুরের পাইপ (চ্যান্টার) এবং এক বা একাধিক ড্রোন পাইপ থাকে। চ্যান্টারটিতে সুর বাজানোর জন্য আঙ্গুলের ছিদ্র থাকে, আর ড্রোন পাইপগুলো একটানা একটি নির্দিষ্ট সুর বাজিয়ে যায়, যা ডিউডাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পুরোনো ডিউডাসের রিড বাঁশের তৈরি হলেও এখন আধুনিক উপাদানের ব্যবহারও দেখা যায়। সত্যি বলতে, এই যন্ত্রের নির্মাণশৈলী দেখে আমি অভিভূত, কত দক্ষতা আর যত্নে এটি তৈরি করা হয়!
নাচ ও উদযাপনে এর ভূমিকা
লাটভিয়ার লোকনৃত্য আর বিভিন্ন উৎসবে ডিউডাসের ভূমিকা অপরিসীম। এর প্রাণবন্ত সুর ছাড়া যেন কোনো উদযাপনই পূর্ণতা পায় না। বিয়ে, লোকনৃত্য বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ডিউডাস বাজানো হয়। এর শক্তিশালী আর ছন্দময় সুর দ্রুতই মানুষকে নাচের ছন্দে মাতিয়ে তোলে। আমার মনে পড়ে, একবার একটি লাটভিয়ান ফোক ফেস্টিভ্যালে ডিউডাসের সুর শুনে আমি নিজেও নাচতে শুরু করেছিলাম, যদিও আমি নাচতে একেবারেই জানি না! এটাই এই যন্ত্রের জাদু। ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন বেহালা এবং হারমোনিকার মতো নতুন যন্ত্র লাটভিয়ায় প্রবেশ করে, তখন ডিউডাসের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গিয়েছিল। তবে, ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে লোকসংস্কৃতি আন্দোলনকারীরা এটি পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হন। এই পুনরুজ্জীবন শুধু একটি বাদ্যযন্ত্রকে ফিরিয়ে আনেনি, বরং লাটভিয়ানদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়কেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ডিউডাসের মাধ্যমে আজও লাটভিয়ার মানুষ তাদের ঐতিহ্য, আনন্দ আর একতাকে প্রকাশ করে। এই যন্ত্রটি আমাকে শেখায়, কিভাবে একটা সুর একটা পুরো সম্প্রদায়কে এক সুতোয় বাঁধতে পারে।
স্ট্যাবুলিস: মেষপালকদের বাঁশি থেকে লোকসংগীতে
লাটভিয়ার লোকসংস্কৃতিতে স্ট্যাবুলিস (Stabules) হলো এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাঁশি বা পাইপ, যা একসময় মেষপালকদের নিত্যসঙ্গী ছিল। এই যন্ত্রের সরল অথচ মিষ্টি সুর আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে। যখন এর সুর বাতাসে ভেসে আসে, আমার মনে হয় যেন পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা নদীর কলকল ধ্বনি অথবা পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এই যন্ত্রটি প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। এটি শুধু মেষপালকদের সময় কাটানোর মাধ্যম ছিল না, বরং তাদের অনুভূতি আর প্রকৃতির সাথে তাদের গভীর সংযোগের এক সুন্দর প্রকাশ ছিল। স্ট্যাবুলিস বাজানোর সময় মনে হয়, যেন কোনো শিল্পী প্রকৃতির সঙ্গেই কথা বলছেন। ছোটবেলায় আমি যখন বাঁশির সুর শুনতাম, তখন কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতাম। স্ট্যাবুলিসের সুরও আমাকে সেই পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে প্রকৃতির কোলে মানুষ সহজ সরল জীবন কাটাতো।
স্ট্যাবুলিসের বিভিন্ন রূপ ও শব্দ
স্ট্যাবুলিস সাধারণত বাঁশ, কাঠ, শিং বা এমনকি হাড় দিয়ে তৈরি করা হয়, তবে কাঠ দিয়েই বেশি তৈরি হয়। এতে বেশ কয়েকটি ছিদ্র থাকে যা আঙ্গুল দিয়ে বন্ধ ও খোলা করে বিভিন্ন সুর তৈরি করা হয়। লাটগালের মাটির বাঁশি (svilpaunieki) এর একটি বিশেষ প্রকার, যা ঘোড়া, পাখি বা ড্রাগনের মতো দেখতে হয় এবং এগুলো বেশ জনপ্রিয়। ছোট আকারের বাঁশিগুলোকে ‘ভিলপেস’ বলা হয়, যেগুলোতে সাধারণত এক বা দুটি সাউন্ড হোল থাকে এবং এগুলো হাড়, শিং, শাঁস বা মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো। আমার কাছে এই বৈচিত্র্যটাই এই যন্ত্রগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রতিটি স্ট্যাবুলিসেরই নিজস্ব একটি গল্প আছে, নিজস্ব একটি সুর আছে, যা সে অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটায়। এর স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল সুর প্রায়শই পাখির ডাক বা ঝর্ণার মৃদু প্রবাহের মতো শোনায়। আধুনিক স্ট্যাবুলিসগুলি আরও পরিশীলিত হয়েছে, কিন্তু এর মূল সৌন্দর্য আর সরলতা আজও অমলিন। এই বাঁশি বাজানো আমার কাছে একটা মেডিটেশন বা ধ্যানের মতো মনে হয়, যেখানে আমি প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে পারি।
প্রকৃতি ও মানুষের সুরের বন্ধন
স্ট্যাবুলিস লাটভিয়ার প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্কের এক সুন্দর প্রতীক। মেষপালকরা মাঠে কাজ করার সময় বা একাকী পথ চলার সময় এই বাঁশি বাজাতেন, যা তাদের একঘেয়েমি দূর করত এবং তাদের মনের কথা প্রকাশ করত। এর সুর যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষা, যা মানুষের হৃদয়ে শান্তি এনে দেয়। আমার মনে হয়, এই ধরনের যন্ত্রগুলো আমাদের আধুনিক জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সহজ সরল আনন্দের কথা মনে করিয়ে দেয়। যখন কোনো উৎসবে স্ট্যাবুলিসের সুর বেজে ওঠে, তখন মনে হয় যেন পুরো পরিবেশটা এক নিমিষেই প্রকৃতির কোলে ফিরে গেছে। এটি শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, এটি লাটভিয়ানদের জীবনধারার অংশ, যা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। স্ট্যাবুলিসের সুর শুনলে বোঝা যায়, প্রকৃতির মাঝে কীভাবে মানুষ সুর খুঁজে পেয়েছে এবং সেই সুরকে নিজের জীবনের অঙ্গ করে নিয়েছে। এই যন্ত্রটি আমাকে শিখিয়েছে, কীভাবে ছোট ছোট জিনিসও আমাদের জীবনে বড় আনন্দ নিয়ে আসতে পারে।
অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রের কথা: বৈচিত্র্যময় সুরের জগৎ
কোকলে, ডিউডাস আর স্ট্যাবুলিস ছাড়াও লাটভিয়ায় আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র আছে, যা তাদের লোকসংগীতের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। এই যন্ত্রগুলো লাটভিয়ার মানুষের দৈনন্দিন জীবন, আনন্দ-উৎসব আর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমার মনে হয়, প্রতিটি যন্ত্রেরই নিজস্ব একটি ব্যক্তিত্ব আছে, যা একে অপরের থেকে আলাদা এবং বিশেষ। এই বৈচিত্র্যই লাটভিয়ান সংস্কৃতিকে এত প্রাণবন্ত করে তোলে। যখন এসব যন্ত্র একসাথে বেজে ওঠে, তখন এক অসাধারণ সুরের ঝংকার তৈরি হয় যা মানুষকে মুগ্ধ করে। এই সুরগুলো শুধু কানে বাজেনা, বরং হৃদয়ে এক গভীর অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
ত্রাইডেক্সনিস ও ঘানার তাল

ত্রাইডেক্সনিস (Trideksnis) হলো লাটভিয়ার এক ধরনের ঝুনঝুনি লাঠি বা র্যাটল স্টিক, যা তাল বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রটি একটি ছোট কাঠের হাতলের সাথে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ছোট ছোট ধাতব টুকরা দিয়ে তৈরি। বাদ্যযন্ত্রী এটাকে ঝুনঝুনির মতো নাড়িয়ে বা অন্য হাতের তালুর উপর আঘাত করে বাজায়, যা থেকে এক ধরনের ঝনঝন শব্দ তৈরি হয়। আমার মনে হয়, এর শব্দ শুনলে যে কারোরই পা আপনাআপনি তালে তালে দুলে উঠবে। velna bungas (ডেভিল’স ড্রাম) নামে একটি বড় আকারের র্যাটল স্টিকও আছে, যা প্রায় ৪-৫ ফুট লম্বা হয় এবং মেঝেতে আঘাত করে বাজানো হয়। এই যন্ত্রগুলো বিশেষ করে নাচের সময় ব্যবহৃত হয় এবং এর ছন্দময় শব্দ মানুষকে নাচের জন্য উৎসাহিত করে। উৎসবের সময় যখন অনেক মানুষ একসাথে নাচতে শুরু করে, তখন ত্রাইডেক্সনিসের তাল যেন সেই আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
জিগা ও তন্তু বাদ্যের মুগ্ধতা
জিগা (Ģīga) হলো লাটভিয়ার এক ধরনের তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র, যা ধনুক দিয়ে বাজানো হয়, অনেকটা বেহালার মতো। এর সমৃদ্ধ আর আবেগপূর্ণ সুর লোকনৃত্য আর গল্প বলার জন্য উপযুক্ত। জিগা প্রায়শই বিভিন্ন লোকসংগীতের দলে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ঐতিহ্যবাহী লাটভিয়ান সঙ্গীতে গভীরতা ও সংহতি যোগ করে। এছাড়াও, pūšļa vijole (ব্লাডার ফিডল) নামে আরেকটি তারযুক্ত যন্ত্র আছে, যেখানে একটি স্ফীত পশুর ব্লাডার সাউন্ডবোর্ড হিসেবে কাজ করে। এই যন্ত্রগুলো লাটভিয়ার লোকসংগীতের তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্রের বৈচিত্র্য তুলে ধরে। যখন জিগার আবেগপূর্ণ সুর আর কোকলের শান্ত সুর একসাথে মিশে যায়, তখন এক অসাধারণ সমন্বয় তৈরি হয় যা সত্যিই মনকে ছুঁয়ে যায়। আমার মনে হয়, এই তারযুক্ত যন্ত্রগুলোর সুর যেন লাটভিয়ার মাটির গল্প বলে, তাদের হাসি-কান্না আর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকে।
| যন্ত্রের নাম | প্রকার | বৈশিষ্ট্য | সাংস্কৃতিক গুরুত্ব |
|---|---|---|---|
| কোকলে (Kokle) | তারযুক্ত (Zither) | কাঠের ফাপা বাক্স, তারযুক্ত; শান্ত ও সুরেলা শব্দ | লাটভিয়ার জাতীয় প্রতীক, লোকসংগীত ও ঐতিহ্যবাহী গল্পের বাহক |
| ডিউডাস (Dūdas) | বায়ুযন্ত্র (Bagpipe) | চামড়ার থলি, কয়েকটি পাইপ; শক্তিশালী ও প্রতিধ্বনিত শব্দ | উৎসব, নাচ ও উদযাপনের অপরিহার্য অংশ, একতার প্রতীক |
| স্ট্যাবুলিস (Stabules) | বায়ুযন্ত্র (Flute/Pipe) | কাঠ, বাঁশ, শিং বা হাড়ের বাঁশি; স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল শব্দ | মেষপালকদের যন্ত্র, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সুরের বন্ধন |
| ত্রাইডেক্সনিস (Trideksnis) | তাল বাদ্য (Rattle Stick) | কাঠের হাতল, ধাতব টুকরা; ছন্দময় ঝনঝন শব্দ | নাচ ও আনন্দ অনুষ্ঠানে তালের জন্য ব্যবহৃত |
| জিগা (Ģīga) | তারযুক্ত (Bowed Instrument) | ধনুক দিয়ে বাজানো হয়; সমৃদ্ধ ও আবেগপূর্ণ শব্দ | লোকনৃত্য ও গল্প বলার জন্য ব্যবহৃত, এনসেম্বলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা |
লাটভিয়ার লোকসংগীত: যন্ত্র ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ
লাটভিয়ার লোকসংগীত তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ, আর এই সংগীতের প্রাণ হলো এর বৈচিত্র্যময় বাদ্যযন্ত্রগুলো। আমার মনে হয়, লাটভিয়ানদের প্রতিটি সুরের পেছনেই তাদের ইতিহাস, বিশ্বাস আর দৈনন্দিন জীবনের গল্প লুকিয়ে আছে। এই যন্ত্রগুলো শুধু সুর তৈরি করে না, বরং লাটভিয়ার মাটি ও মানুষের আত্মাকে ধারণ করে। লোকসংগীতের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ঐতিহ্যগুলো বয়ে চলে, যা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হই। এই সুরগুলো যখন কানে আসে, তখন মনে হয় যেন আমি লাটভিয়ার প্রকৃতির কোলে বসে আছি, যেখানে বাতাসও গান গায়। এই যন্ত্র আর সুরের এমন এক গভীর বন্ধন, যা আমার মনে এক অন্যরকম আবেগ সৃষ্টি করে।
দাইনার সাথে যন্ত্রের সহাবস্থান
লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগীত প্রায়শই দাইনা (dainas) নামক লোককবিতার সাথে পরিবেশিত হয়। দাইনাগুলো খুব সংক্ষিপ্ত হয়, সাধারণত এক বা দুটি স্তবকে গঠিত এবং এতে প্রাক-খ্রিস্টান থিম ও কিংবদন্তি, ড্রোন ভোকাল স্টাইল এবং বাল্টিক সিতারের সুর ফুটে ওঠে। কোকলে, ডিউডাস এবং অন্যান্য যন্ত্রগুলো দাইনার সাথে বাজানো হয়, যা সুর আর কথার এক অপূর্ব সমন্বয় তৈরি করে। আমার মনে হয়, দাইনার সরলতা আর যন্ত্রের গভীর সুর যখন একসাথে মেশে, তখন এক অনন্য অনুভূতি তৈরি হয়। লাটভিয়ানরা এই দাইনাগুলোর মাধ্যমে তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান আর জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এটি কেবল গান নয়, বরং একটি জীবন্ত ইতিহাস। এই লোককবিতাগুলো আমাদের শেখায় কিভাবে প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে বাঁচতে হয় এবং জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট মুহূর্তকে উদযাপন করতে হয়।
উৎসব ও অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী সুরের জাদু
লাটভিয়ার লোকসংগীতের যন্ত্রগুলো বিভিন্ন উৎসব, নাচ এবং আচার-অনুষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। লাটভিয়ান গান ও নাচ উৎসবে শত শত কোকলে বাদকের একযোগে বাজানো সত্যিই এক অসাধারণ দৃশ্য, যা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। এই ধরনের অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলো প্রাণবন্ত সুর তৈরি করে যা মানুষকে নাচের ছন্দে মাতিয়ে তোলে এবং একতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। আমার মনে হয়, এই উৎসবগুলো শুধু আনন্দের জন্য নয়, বরং নিজেদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক দারুণ সুযোগ। যখন এসব অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী সুরগুলো বেজে ওঠে, তখন মনে হয় যেন হাজার বছরের পুরোনো আত্মাগুলো নতুন করে জেগে উঠেছে। এই যন্ত্রগুলো লাটভিয়ার প্রতিটি উৎসবকে এক নতুন মাত্রা দেয়, যেখানে সকলেই তাদের সংস্কৃতিতে গর্ব অনুভব করে।
ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র নির্মাণ: হারিয়ে যাওয়া শিল্প পুনরুদ্ধার
লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলো শুধু সুরের বাহক নয়, এগুলো কারুশিল্পের এক অসাধারণ উদাহরণ। একসময় এই যন্ত্রগুলো তৈরি করার প্রক্রিয়া প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, কিন্তু এখন শিল্পীরা আবার পুরোনো পদ্ধতিগুলোকে ফিরিয়ে আনছেন এবং নতুন করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলছেন। আমার মনে হয়, এই কারিগররা শুধু কাঠ বা চামড়া দিয়ে যন্ত্র তৈরি করেন না, বরং এর মধ্যে নিজেদের আত্মা আর ভালোবাসা ঢেলে দেন। প্রতিটি যন্ত্র তৈরির পেছনে থাকে গভীর সাধনা আর ঐতিহ্যের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। এই কাজটা আমার কাছে কোনো সাধারণ কাঠমিস্ত্রির কাজ মনে হয় না, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক কাজ, যেখানে একজন শিল্পী তার পূর্বপুরুষদের সাথে একাত্ম হন।
কোকলে তৈরির কারিগরি দিক
কোকলে তৈরি করা একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও ধৈর্যসাপেক্ষ কাজ। ঐতিহ্যবাহী কোকলে এক টুকরা কাঠ খোদাই করে তৈরি করা হয়, যা এর শব্দকে এক বিশেষ গভীরতা দেয়। এর জন্য সাধারণত লিন্ডেন বা বার্চের মতো কাঠ ব্যবহার করা হয়। কনসার্ট কোকলের জন্য ম্যাপেল কাঠ ব্যবহার করা হয়, যা এর পেশাদারী সুরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোকলের ফাপা বাক্স, পাতলা সাউন্ডবোর্ড এবং তারগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয় যাতে একটি নিখুঁত প্রতিধ্বনিত সুর তৈরি হয়। আমার মনে হয়, একজন কোকলে নির্মাতার দক্ষতা শুধু তার হাতের কাজে নয়, বরং সুরের প্রতি তার গভীর বোঝাপড়ার মধ্যেও নিহিত। তারগুলো সঠিকভাবে স্থাপন করা এবং প্রতিটি তারের সঠিক টান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। বর্তমানে এমন কর্মশালাও তৈরি হচ্ছে যেখানে নতুন প্রজন্মকে কোকলে তৈরির কৌশল শেখানো হচ্ছে, যা এই প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।
নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া
ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র তৈরি এবং বাজানোর ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাটভিয়ায় এখন অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যাতে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই এই যন্ত্রগুলোর সাথে পরিচিত হতে পারে এবং এগুলো বাজানো শিখতে পারে। আমার মনে হয়, এই ধরনের শিক্ষামূলক প্রোগ্রামগুলো শুধু বাদ্যযন্ত্র শেখায় না, বরং শিশুদের মধ্যে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। কোকলে এনসেম্বলগুলো এখন শিশুদের স্কুল-পরবর্তী কার্যকলাপের একটি জনপ্রিয় অংশ। যখন আমি দেখি ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কোকলে বা ডিউডাস বাজিয়ে আনন্দে মেতে আছে, তখন আমার খুব ভালো লাগে। এর মাধ্যমে তারা তাদের শেকড়ের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং ভবিষ্যতের জন্য ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখে। এই যন্ত্রগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লাটভিয়ানদের গল্প, গান এবং ঐতিহ্যকে বহন করে আসছে, আর এর মাধ্যমে আগামীতেও এই সুরগুলো অমর হয়ে থাকবে।
আহ, বন্ধুরা! লাটভিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী সুরের জগতে ডুব দিতে গিয়ে আমি সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি। কোকলের শান্ত সুর, ডিউডাসের প্রাণবন্ত ধ্বনি আর স্ট্যাবুলিসের প্রকৃতির ছোঁয়া—সবকিছুই যেন আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিল। এই যন্ত্রগুলো শুধু সুরের বাহক নয়, লাটভিয়ানদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর আবেগকেও ধারণ করে। আমি আশা করি, এই যাত্রায় আপনারাও আমার মতো মুগ্ধ হয়েছেন এবং এই সুন্দর ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্বটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এই অসাধারণ সুরগুলো আমাদের সবার মনে চিরকাল বেঁচে থাকুক।
আলুনুসোঁ সোলমু ইন্নু সোম্বুরো (알아두면 쓸모 있는 정보)
১. লাটভিয়ার জাতীয় বাদ্যযন্ত্র কোকলে মূলত একটি তারযুক্ত যন্ত্র, যা প্রাচীনকাল থেকে তাদের লোকসংগীতের প্রাণ। এর মায়াবী সুর মানুষের মনকে শান্তি দেয়।
২. ডিউডাস, যা লাটভিয়ান ব্যাগপাইপ নামে পরিচিত, সাধারণত উৎসব ও উদযাপনে ব্যবহৃত হয় এবং এর শক্তিশালী সুর মানুষকে নাচের ছন্দে মাতিয়ে তোলে, একতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
৩. স্ট্যাবুলিস হলো এক ধরনের বাঁশি যা একসময় মেষপালকদের দ্বারা বাজানো হতো এবং এটি প্রকৃতির সাথে মানুষের গভীর সংযোগের প্রতীক, যার স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল সুর পাখির ডাকের মতো শোনায়।
৪. ঐতিহ্যবাহী লাটভিয়ান সংগীত প্রায়শই দাইনা (Dainas) নামক সংক্ষিপ্ত লোককবিতার সাথে পরিবেশিত হয়, যা তাদের প্রাচীন প্রজ্ঞা, বিশ্বাস ও জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতাকে বহন করে।
৫. লাটভিয়ায় বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও বাজানোর শিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে, যা এই প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সংক্ষেপে (중요 사항 정리)
লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলো তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা তাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, গভীর ঐতিহ্য এবং প্রতিদিনের জীবনকে প্রতিফলিত করে। কোকলে, ডিউডাস, স্ট্যাবুলিস—এই প্রতিটি যন্ত্রই লাটভিয়ানদের আত্মপরিচয়ের শক্তিশালী প্রতীক। কোকলের মায়াবী সুর যেমন মনকে প্রশান্তি ও ধ্যানময় অনুভূতি দেয়, তেমনি ডিউডাসের প্রাণবন্ত ধ্বনি যেকোনো উৎসবের মেজাজকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে, মানুষকে এক ছন্দে মেলাতে সাহায্য করে। মেষপালকদের সঙ্গী স্ট্যাবুলিস প্রকৃতির সাথে মানুষের এক নিবিড় ও সরল সম্পর্কের গল্প বলে, যা তার সুরের মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। এই যন্ত্রগুলো শুধু সুর তৈরি করে না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লাটভিয়ার গল্প, গান এবং অমূল্য ঐতিহ্যকে সযত্নে বহন করে চলেছে, যা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হই। এসব ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রের পুনরুজ্জীবন আর নতুন প্রজন্মের মধ্যে এর বিস্তারের ফলে লাটভিয়ান সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সংস্কৃতিকে লালন করা এবং তার প্রতি যত্নশীল হওয়া কতটা জরুরি, কারণ এটিই আমাদের শেকড়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: লাটভিয়ার সবচেয়ে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলো কী কী এবং এদের সুর কেমন শোনায়?
উ: আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের কথা উঠলে প্রথমেই যে তিনটে নাম মাথায় আসে, সেগুলো হলো – কোকলে (Kokle), ডিউডাস (Dūdas) আর স্টেবিলাইটস (Stabules)। এই যন্ত্রগুলো যেন লাটভিয়ার আত্মাকে সুরের মাধ্যমে তুলে ধরে। কোকলে হলো এক ধরণের স্ট্রিং যন্ত্র, দেখতে অনেকটা ভারতীয় বীণার মতো, তবে এর নিজস্ব একটা ভিন্নতা আছে। এর তারগুলো যখন বাজানো হয়, তখন মনে হয় যেন জলের উপর ছোট ছোট ঢেউ খেলছে – এক মিষ্টি, ঝংকারপূর্ণ আর মন্ত্রমুগ্ধ করা সুর। আমার তো মনে হয়, কোকলে বাজলে মনটা আপনা থেকেই শান্ত হয়ে যায়। এরপর আসি ডিউডাসে, এটি হলো এক ধরণের ব্যাগপাইপ, যা স্কটল্যান্ডের ব্যাগপাইপের থেকে অনেকটাই আলাদা। এর শব্দটা বেশ জোরালো আর উৎসবমুখর, যা শুনলে যেকোনো অনুষ্ঠানে এক অন্যরকম প্রাণবন্ততা আসে। আমি তো ডিউডাস বাজানো কোনো ভিডিও দেখতে শুরু করলে শেষ না করে উঠতে পারি না!
আর স্টেবিলাইটস হলো লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাঁশি। এর সুরটা খুবই শান্ত আর গ্রামের মেঠো পথের মতো সরল। আমি যখন প্রথমবার স্টেবিলাইটস-এর সুর শুনি, তখন মনে হয়েছিল যেন কোনো রাখাল তার ভেড়ার পাল নিয়ে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর সেই সুরটা বাতাসে ভেসে আসছে। সত্যি বলতে, এই যন্ত্রগুলোর প্রতিটিরই নিজস্ব একটা গল্প আছে, যা এদের সুরের মধ্যে দিয়ে আমরা শুনতে পাই।
প্র: এই ঐতিহ্যবাহী লাটভিয়ান বাদ্যযন্ত্রগুলো কি আজও আধুনিক যুগে সমানভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কী?
উ: আমার মনে হয়, এই প্রশ্নটা সবার মনেই আসে! সত্যি বলতে, লাটভিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলো আজও তাদের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি তো নিজে দেখেছি, কীভাবে লাটভিয়ার মানুষ তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। কোকলে, ডিউডাস আর স্টেবিলাইটস শুধু জাদুঘরের শো-পিস নয়, বরং আজও বিভিন্ন উৎসব, লোকনৃত্য, পারিবারিক জমায়েত এবং বিশেষ করে লোকসংগীতের অনুষ্ঠানে প্রাণবন্তভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন ধরুন, কোনো বড় লোকসংগীত উৎসবে গেলে দেখবেন, তরুণ-তরুণীরা কোকলে নিয়ে নিজেদের সুর তৈরি করছে, আবার ডিউডাসের তালে তালে নাচছে সবাই। আমার তো মনে হয়, এই যন্ত্রগুলো যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লাটভিয়ার ইতিহাস, গল্প আর আবেগকে বহন করে চলেছে। এরা শুধুমাত্র সুরের বাহক নয়, বরং একটি জাতিসত্তার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন প্রজন্মকে এই যন্ত্রগুলো শেখানোর জন্য অনেক স্কুল আর ওয়ার্কশপ আছে, যা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আমার মতে, এই প্রচেষ্টাগুলোই প্রমাণ করে যে, ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলো আজও লাটভিয়ার সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে কতটা দৃঢ়ভাবে টিকে আছে।
প্র: লাটভিয়ার এই বাদ্যযন্ত্রগুলোর পেছনে এমন কোনো আকর্ষণীয় গল্প বা ইতিহাস আছে কি, যা সাধারণ মানুষ জানে না?
উ: হ্যাঁ, অবশ্যই আছে! আমি তো নিজে যখন লাটভিয়ার বাদ্যযন্ত্রগুলো নিয়ে গবেষণা করছিলাম, তখন অনেক মজার গল্প আর তথ্য জানতে পারি, যা সত্যিই আমাকে অবাক করেছে। যেমন, কোকলে সম্পর্কে একটা দারুণ গল্প আছে। বলা হয়, কোকলে নাকি মানুষের মনের দুঃখ আর আনন্দকে তার তারের মধ্যে ধরে রাখে। যখন কেউ কোকলে বাজায়, তখন সেই তারগুলো যেন মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে সুরের মাধ্যমে প্রকাশ করে। আমার তো মনে হয়, কোকলে শুধু একটা যন্ত্র নয়, এটা যেন একজন বিশ্বস্ত বন্ধু, যে আপনার সব কথা শোনে আর আপনাকে সঙ্গ দেয়। আরেকটি মজার তথ্য হলো, ডিউডাস অর্থাৎ ব্যাগপাইপ শুধুমাত্র উৎসবের যন্ত্র ছিল না, প্রাচীনকালে নাকি এটি যুদ্ধের সময়ও ব্যবহৃত হতো!
সৈন্যদের মধ্যে উদ্দীপনা জাগাতে আর শত্রুদের ভয় দেখাতে এর জোরালো শব্দ ব্যবহার করা হতো। ভাবুন তো, যুদ্ধের ময়দানে ডিউডাসের সেই রণহুংকার কেমন লাগতো! আর স্টেবিলাইটস, অর্থাৎ বাঁশি, প্রায়শই প্রেমের গল্প আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে জড়িত। লাটভিয়ার লোককথায় অনেক সময় এমন দেখা যায় যে, কোনো রাখাল তার প্রিয়তমাকে মুগ্ধ করার জন্য স্টেবিলাইটস বাজাতো, আর সেই সুর বাতাসে ভেসে প্রেমিকার কানে পৌঁছাতো। এই গল্পগুলো শুনে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেছি!
আমার মতে, যন্ত্রগুলো শুধু কাঠ বা তারের সমষ্টি নয়, এরা লাটভিয়ার মানুষের আবেগ, ইতিহাস আর কল্পনার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই কারণেই আমি যখন এই যন্ত্রগুলো সম্পর্কে জানি, তখন শুধু সুর নয়, এদের সাথে জড়িয়ে থাকা এই গল্পগুলোও আমার মন ছুঁয়ে যায়।






